Tuesday, July 25, 2017

আপনিতো মিয়া চোরের অফিসে চাকরি করেন।



একথা বলা বাহুল্য, আমার পাঠকরা প্রায় সবাই জানেন যে আমি একজন দরিদ্র NGO কর্মী। আমার অফিসের নাম XYZ. যদিও এটা আমার কল্পিত নাম। যাহোক, আমার XYZ অফিসের বিশাল একটা হাসপাতাল আছে শহীদপুরের ডালনাতে। বলা ভালো, কাকতাল এড়াতে আমি জেলার নাম শহীদপুর দিলাম, যাতে বাংলাদেশের কোনো জেলার নামের সাথে না মেলে। তারপরেও যদি কেউ শহীদপুর এর বিপরীত গাজীপুর মিলিয়ে ফেলেন তাহলে সেটা হবে অতি কাকতাল আর সেইসাথে আমার দুর্ভাগ্য। তো আমার সেই আলোচ্য হাসপাতালের সুবাদে ডালনাতে আমার XYZ অফিসকে বেশ ভালোই লোকজন চিনে বলে মনে হয়। তাছাড়া এই অফিসে চাকরি নেয়ার আগে থেকেই আমার ব্যক্তিগত সূত্রে ডালনায় যাওয়া আসা ছিল। সুতরাং ডালনায় কাউকে পরিচয় দিতে চাইলে নিজে XYZ  অফিসে চাকুরী করি সেটা বলতেই বেশ গর্ববোধ করতাম। 

আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে প্রায় কিছুদিন অন্তর শহিদপুরে যাই। সবদিনকার মতো সেদিনও শুক্রবার বিকেলবেলা ডালনায় একটি দোকানে চা খাচ্চিলাম, কাছেই স্থানীয় এক ভদ্রলোক (দেখে হোমড়া চোমড়া মনে হয়) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'ভাইকে এইখানে আর দেখি নাই, এলাকায় নতুন আসলেন?'  আমি উত্তর দিলাম, 'অমুকের বাড়িতে আমি মাঝে মাঝে আসি'। ভদ্রলোকের পরবর্তী প্রশ্ন, 'তা কি করেন?' আমি এবার XYZ এর সুনামের কথা চিন্তা করে বেশ উৎসাহ নিয়ে উত্তর দিলাম, 'জ্বি, XYZ -এ'। আবার প্রশ্ন, 'চোরের অফিসে?' লোকটার কথাটা বুঝতে না পেরে, আমি আবার বললাম, 'জ্বি, এই ডালনার XYZ -এ'। লোকটা বেশ বড় গলায় উপস্থিত সবাইকে শুনিয়ে বললো, ''জানি জানি, এই XYZ. এটা একটা চোরের অফিস। আপনি মনে হয় নতুন জয়েন করেছেন, তাই জানেন না। আমাদের ডালনায় চোরের অফিস বললে সবাই XYZ কেই চিনে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, সাত্তার নাম আপনাদের এক গার্ড ছিল, সে আপনাদের অফিসের এক অফিসারকে ২কেজি ব্লিচিং পাউডার অফিস থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে নাতে  ধরেছিলো। তাকে চোর ধরতে সাহায্য করেছিল আলী নাম এক স্টাফ। শেষে কি হলো জানেন? ২০১৩ সালে ধরা খাওয়া ওই অফিসার প্রমোশন পেয়ে ম্যানেজার হলো, সাত্তার এর চাকরি গেলো ঘটনার ২ বছর পর, আলীর বাৎসরিক বেতন বাড়ার বদলে কমল কোনো কারণ ছাড়া। এবার আপনি বলুন, যে অফিস চোর অফিসারকে ম্যানেজার বানায়, গার্ড সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার অপরাধে (পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওই গার্ড এর চাকুরী চ্যুতি হয়েছিল বটে, তবে কোথাও ওই কথা লেখা ছিলোনা) চাকুরী যায়, যে অফিস তার একজন সৎ স্টাফের বেতন কমিয়ে দেয়, সে অফিস চোরের অফিস না তো কি?' লোকটার আরো লম্বা কথা ছিল, আমার পাঠকদের বিরক্তি হবে বলে উল্লেখ করলাম না। যেটুকু মানসম্মান ওইদিনকার মতো অবশিষ্ট ছিল, তা নিয়ে সটকে পড়ার বাসনা নিয়ে যখন আমতা আমতা করে সরে আসছিলাম, তখন একটু দূরে যেতে যেতে লোকটার কথা শুনতে পেলাম, 'আমার নাম সামছু, লাগলে আরো কিছু শুনে যাইয়েন। '

এবার পাঠক বুঝেন, আমি কেমন অফিসে চাকরি করি।  আর কি কোথাও আমার অফিসের নাম বলতে যাবো মনে করেন? ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। 

আপনি আরো পড়তে পারেন:

No comments:

Post a Comment